চীনের SCO বা Shanghai Cooperation Organisation নিয়ে এখন বিশ্বমিডিয়ায় বেশ আলোচনার ঝড় বইছে। অনেকে নামটা শুনেছেন, কিন্তু আসলে SCO কী এবং এর গুরুত্ব কতটা হতে পারে—সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা অনেকের নেই। তাই ভাবলাম দু-একটি সহজ কথা লিখি, যাতে পাঠকেরা বিষয়টি নিয়ে কিছুটা হলেও পরিষ্কার ধারণা পান।
চলুন ধীরে ধীরে বিষয়টা দেখে নিই।
SCO কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?
SCO হলো এক ধরনের আঞ্চলিক সংস্থা, যেটি মূলত চীন, রাশিয়া এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলো মিলে তৈরি করেছে। পরে ভারত, পাকিস্তান, ইরান এবং বেলারুশও যুক্ত হয়েছে। এখন মোট ১০টি দেশ পূর্ণ সদস্য।
এই সংস্থার মূল লক্ষ্য হচ্ছে—
- নিরাপত্তা সহযোগিতা (সন্ত্রাসবাদ দমন, সীমান্ত নিরাপত্তা)
- অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা
- সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা বিনিময়
অর্থাৎ, এককথায় বললে এটি একটি বড় আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্ম যেখানে এশিয়ার বড় শক্তিগুলো একসঙ্গে বসে আলোচনা করে।
২০২৫ সালের SCO মিটিং কোথায় হচ্ছে?
২০২৫ সালের ৩১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই শীর্ষ বৈঠক হবে চীনের তিয়াঞ্জিন শহরে। এটিই হবে ২৫তম SCO সামিট।
কারা কারা অংশ নিচ্ছেন?
এই সম্মেলনে আসছেন এশিয়ার ও বিশ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা।
পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধান/প্রধানমন্ত্রী
- চীন – রাষ্ট্রপতি Xi Jinping (হোস্ট)
- ভারত – প্রধানমন্ত্রী Narendra Modi (প্রায় ৭ বছর পর চীনে তাঁর প্রথম সফর)
- রাশিয়া – প্রেসিডেন্ট Vladimir Putin
- ইরান – প্রেসিডেন্ট Masoud Pezeshkian
- পাকিস্তান – প্রধানমন্ত্রী Shehbaz Sharif
- কাজাখস্তান – প্রেসিডেন্ট Kassym-Jomart Tokayev
- কিরগিজ রিপাবলিক – প্রেসিডেন্ট Sadyr Japarov
- তাজিকিস্তান – প্রেসিডেন্ট Emomali Rahmon
- উজবেকিস্তান – প্রেসিডেন্ট Shavkat Mirziyoyev
- বেলারুশ – প্রেসিডেন্ট Alexander Lukashenko (২০২৪ সালে পূর্ণ সদস্য হয়েছেন)
আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিশেষ অতিথি
- জাতিসংঘ মহাসচিব António Guterres
- ASEAN-এর প্রতিনিধি
- অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ডায়ালগ পার্টনারদের প্রতিনিধিদলও এই বৈঠকে যোগ দেবেন।
রাজনৈতিক গুরুত্ব ও মেরুকরণ
এই বৈঠককে অনেকে বলছেন একটি “গ্র্যান্ড শো অফ সলিডারিটি”—মানে বড় দেশগুলো বিশ্বকে দেখাতে চাইছে যে তারা একসাথে আছে।
- চীন ও রাশিয়া এই মঞ্চ ব্যবহার করছে পশ্চিমা প্রভাবের পাল্টা হিসেবে।
- ভারত যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের সাথেও ঘনিষ্ঠ, তবুও এখানে অংশ নিচ্ছে কারণ প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক রাখা জরুরি।
- পাকিস্তান ও ইরান এই সংগঠনের ভেতরে নিজেদের কণ্ঠস্বর জোরালো করতে চাইবে।
এভাবে বলা যায়, এই বৈঠক আসলে এশিয়ার বড় শক্তিগুলোর মধ্যে এক ধরনের ঐক্য প্রদর্শনের মঞ্চ। তবে মনে রাখতে হবে, SCO সরাসরি কোনো যুদ্ধ থামায় না বা রাজনৈতিক সংকট মিটিয়ে দেয় না—এটি মূলত আলোচনা ও সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম।
বাংলাদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে এর মানে কী?
বাংলাদেশ এখনও SCO-এর সদস্য নয়। তবে চীন বাংলাদেশকে আগ্রহী দেশ হিসেবে সমর্থন করছে। ভবিষ্যতে হয়তো “ডায়ালগ পার্টনার” বা সদস্য হওয়ার চেষ্টা করতে পারে।
কিন্তু এই মিটিং বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলবে না। কারণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সংকট (দলীয় দ্বন্দ্ব, নির্বাচন ইত্যাদি) মূলত দেশের ভেতরের ইস্যু। SCO এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে না।
মিয়ানমারের যুদ্ধ কি থামবে?
মিয়ানমারে বর্তমানে গৃহযুদ্ধ চলছে, বিশেষ করে আরাকান আর্মি (AA) রোহিঙ্গা সীমান্তের কাছে এলাকাগুলো দখল করছে।
- মিয়ানমার SCO-এর পূর্ণ সদস্য নয়, শুধু ডায়ালগ পার্টনার।
- তাই SCO সরাসরি সেখানে হস্তক্ষেপ করবে না।
- তবে চীন ও রাশিয়া চাইলে এই মঞ্চ ব্যবহার করে মিয়ানমারের বিষয়ে নরম আলোচনার সুযোগ তৈরি করতে পারে।
অতএব, এই সম্মেলনের পরপরই মিয়ানমারের যুদ্ধ থেমে যাবে বা বাংলাদেশের পরিস্থিতি একেবারে শান্ত হবে এমন আশা করা যায় না। তবে তিনটি বড় দেশের নেতাদের মধ্যে দেখা হচ্ছে। আর এতে যদি তারা আলাদা কিছু কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয় অবাক হওয়ার কিছু নেই। তাহলে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার রাজনৈতিক পরিস্থিতির ব্যাপক কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।