গত কয়েকদিনের ঘটনা এশিয়ার রাজনৈতিক মানচিত্রে এক নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশ সেনাপ্রধান চীন সফর শেষ করে ফিরেছেন, এর পরপরই চীনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে দেশের নবীন রাজনৈতিক শক্তি, ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (NCP)। এই দলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নাহিদ ইসলাম। তারা চীনা সরকারের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণে ২৬–৩১ আগস্ট সময়কালে নয় সদস্যের প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে। সফরের আগে ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেছেন NCP নেতারা, আর চীনে তারা বৈঠক করবেন কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগ, প্রাদেশিক রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক নেতাদের সঙ্গে, পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়, শিল্প কারখানা এবং উন্নত শহর চংকিং পরিদর্শন করবেন।
অন্যদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তার দলও চীন সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, পুতিনও আসবেন এশিয়ার আঞ্চলিক কূটনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন—SCO (Shanghai Cooperation Organization) বৈঠকে। বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলো এখনো SEO প্ল্যাটফর্মে নেই, কিন্তু NCP নেতারা বুঝে গেছেন, এশিয়ায় শক্তির খেলা এখন পশ্চিম নয়, বরং চীন-ভারত-রাশিয়ার ত্রিমুখী প্রভাবে ঘুরছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ। সেনাপ্রধানের সফর এবং NCP-এর এই পদক্ষেপ ইঙ্গিত দিচ্ছে—দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতে আঞ্চলিক শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা ছাড়া বিকল্প নেই। অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক প্রভাবের ভারসাম্য এখন আর একমুখী নয়। চীনের অর্থনৈতিক শক্তি, রাশিয়ার সামরিক কৌশল আর ভারতের আঞ্চলিক প্রভাব মিলেই নতুন এশিয়ার রাজনীতি তৈরি করছে।
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—এই সফরগুলো শুধুই সৌজন্যবোধ, নাকি ভেতরে ভেতরে নতুন জোট, নতুন সমীকরণের প্রস্তুতি? যারা আগে থেকেই লাইনে দাঁড়িয়েছে, তারা হয়তো বুঝে গেছে—এশিয়ার নতুন খেলায় চীনকে বাদ দিয়ে ক্ষমতার সমীকরণ সাজানো অসম্ভব।
তবে আমার মনে হচ্ছে, এখানে খেলা কিছুটা আলাদা। সেনাপ্রধানের সঙ্গে NCP-এর যথেষ্ট দ্বন্দ্ব বিদ্যমান, এবং অনেকেই NCP-কে ইউনুসের দল হিসেবেও দেখেন। তাহলে কি সেনাপ্রধানের চীন সফরকে মোকাবিলা করতে NCP-এর এই সফর সাজানো হলো? নির্বাচন কি তবে এখন শুধু অমাবস্যার রাতে পূর্ণিমার স্বপ্ন হয়ে যাচ্ছে?