আজকের দিনে আমার মনে হচ্ছে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা দরকার। অনেক সময় আমি একটি পোস্ট লিখতে ৩ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় নিই। কিন্তু আজ ভিন্ন মনে হচ্ছে। কারণ আগের লেখার পরে অনেকেই আমাকে মেসেজ দিয়ে জানতে চেয়েছেন, “কী করে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যুদ্ধ সম্ভব?”
আমার উত্তর আছে। তবে আগে বলে রাখি, আমার কোনো দেশের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা নেই। আমি কোনো রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্বও করি না। আমি একজন সাধারণ মানুষ। আর একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে যদি রাজনৈতিক বাস্তবতা বিশ্লেষণ করি, সেটি কোনো অপরাধ নয়।
কিন্তু বিষয়টি বুঝতে হলে, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, রাশিয়া, চীন এবং আমেরিকার স্বার্থ কী বা তারা কে কী চায় তা বুঝতে হবে। সমাধান বুঝতে হলে এই একটি পোস্ট আপনাকে পড়তে হবে।
চলুন, বাংলাদেশ দিয়ে শুরু করি।
বাংলাদেশের বাস্তবতা
বাংলাদেশের চাওয়া আমরা জানি। দেশের ৯৯% মুসলিম এখন বিশ্বাস করে—এই দেশটি পুরোপুরি মুসলিম রাষ্ট্র হওয়া উচিত। অমুসলিমদের তারা সহ্য করতে রাজি নয়। কাজেই যারা সংখ্যালঘু, তাদের হয় তাড়ানো হবে, না হয় হত্যা করা হবে, না হয় জোরপূর্বক ধর্মান্তর করা হবে। এটাই আজকের বাংলাদেশের প্রবণতা।
সংখ্যালঘুদের মন্দির ভাঙা, নারী নির্যাতন, জমি দখল—এসব ঘটনা দিনরাত ২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশে বিরামহীনভাবে ঘটছে। ভারতের কাছে এগুলো কেবল মানবাধিকার ইস্যু নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন।
ভারতের স্বার্থ
ভারত চায় বাংলাদেশ একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্র হোক। কারণ যদি সংখ্যালঘুরা বাংলাদেশে টিকে থাকতে না পারে, তবে তারা সবাই ভারতে পাড়ি জমাবে। সেই ঢল ভারত কোনোভাবেই সামলাতে পারবে না। তাই ভারতের কাছে এই সমস্যার সমাধান করা ছাড়া উপায় নেই।
প্রায় প্রতি বছরই বিএসএফ-বিজিবি সংঘর্ষ হয়। ভারত বলে বাংলাদেশ সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ, বাংলাদেশ বলে ভারত অযথা শক্তি দেখাচ্ছে। এই সংঘর্ষ দুই দেশের সম্পর্ককে তিক্ত করে তুলছে।
তিস্তা নদীর পানি নিয়ে বিরোধ বহুদিনের। বাংলাদেশ মনে করে ভারত নদীর পানি আটকে রাখছে। ভারত বলে, এতে রাজ্যগুলোর স্বার্থও জড়িত। এই সমস্যা সম্পর্ককে আরও দুর্বল করে দিয়েছে।
তাছাড়া ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করা চিকেন’স নেক তার কাছে প্রাণরসা। বাংলাদেশ যদি এখানে কোনো অশান্তি সৃষ্টি করে, ভারত মনে করে পুরো উত্তর-পূর্ব বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এখন ভারত এই হুমকির পুরো সমাধান চায়।
পাকিস্তানের হিসাব
পাকিস্তান চায় বাংলাদেশ একই পথে হাঁটুক—অর্থাৎ মৌলবাদী রাষ্ট্র হয়ে উঠুক। এতে ভারত নতুন এক সংকটে পড়বে। আর ভারত যখন বাংলাদেশের সমস্যায় ব্যস্ত থাকবে, তখন পাকিস্তান কাশ্মীর ও বেলুচিস্তানের স্বাধীনতাবাদীদের দমন করতে স্বস্তি পাবে।
রোহিঙ্গা চার বাহিনীর প্রধান একজন পাকিস্তানি নাগরিক—সেটা সবাই জানি। তাই পাকিস্তান চায় বাংলাদেশের ভেতর থেকে ভারতের উত্তর-পূর্বকে অশান্ত করা, সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলোতে সমস্যা তৈরি করা। সেই সঙ্গে রাখাইন দখল করে ধীরে ধীরে মিয়ানমার দখল করার স্বপ্নও তাদের।
এটা শুনতে হাস্যকর মনে হতে পারে। কিন্তু ইতিহাস দেখুন, কীভাবে ভারত ও বাংলাদেশে মুসলিম দখল কায়েম হয়েছে। তখন তো কোনো আরব ছিল না। আজ বাংলাদেশে জনসংখ্যা ১৮ কোটি।
মিয়ানমারে কয়েকজন শ্রমিক গিয়েছিল, এখন তারা কয়েক মিলিয়ন। আর ভারতে কত মুসলিম? আমি জানি না। আপনি বলুন।
চীনের প্রয়োজন
চীন চায় মিয়ানমারের কিয়াকফিউ বন্দর। তার কাছে এই বন্দর দেশের নিরাপত্তা ও সমুদ্রপথ নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এটাকে পুরো দখল করা সহজ নয়। তাই একটু রাজনৈতিক গেম খেলা দরকার।
কারণ চীন জানে, ভারত তা রোধ করবে। আর চীনকে রোধ করতে হলে ভারতের দরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম বন্দর। আর ভারত কিন্তু ঠিকই সেই পথে হাঁটছে। চীনও সেটা বুঝে গেছে।
আমেরিকার অবস্থান
যদি রাশিয়া, চীন, পাকিস্তান ও ভারত একেকটা ঘাঁটি তৈরি করতে পারে, তবে আমেরিকা কেন পিছিয়ে থাকবে? যেই ভাবা সেই কাজ।
আমেরিকাও একভাগ চাইছে। তারও একটি ঘাঁটি দরকার। বঙ্গোপসাগরের দিকে তাদের নজর অনেক দিন ধরেই। তাই এই চাওয়া এখন হাসিল করার সময়।
রাশিয়ার খেলায় প্রবেশ
রাশিয়া কিন্তু এই এশিয়া গেমের মূল খেলোয়াড়। কারণ এই অঞ্চলের দুই প্রধান শক্তি—চীন এবং ভারত—তার বন্ধু।
রাশিয়া জানে এশিয়ায় বড় সমস্যা তৈরি হচ্ছে। তাই সামান্য সুযোগ পেলেই নিজের ভাগ নিশ্চিত করবে। এজন্য তারা একটি ছোট্ট বন্দর ঘাঁটি তৈরি করে বসেছে মিয়ানমারে। যদিও ছোট, কিন্তু অবস্থানগতভাবে তা যথেষ্ট।
সমাধানের সহজ সূত্র
রাজনীতি আসলে কঠিন নয়। আমাদের নেতারা ইচ্ছে করে একে ধাঁধার মতো জটিল করে তোলে। আঞ্চলিক রাজনীতি থেকে আন্তর্জাতিক রাজনীতি প্রায় একই ফর্মুলা। একটু নজর রাখলে না বোঝার কোনো কারণ নেই।
মিয়ানমারের কিয়াকফিউ বন্দরকে ঘিরে যে রাজনৈতিক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, তাও এর ব্যতিক্রম নয়। আসল সত্য হলো, যার যা পাওনা, যদি সেটি তাকে দেওয়া যায়, তাহলে সবাই খুশি হবে, ঝামেলা করবে না।
রাশিয়া যেহেতু এই গেমের চেয়ারম্যান, তাই ইউক্রেন ছিল এই সমাধানের বড় বাধা। কিন্তু সেই বাধা প্রায় দূর হয়ে গেছে। এখন তার আলোকে এশিয়াতেও সমাধান আসতে যাচ্ছে।
ইউক্রেন সংকট প্রায় মিটে যাওয়ার পর রাশিয়া ভারতের দিকে হাত বাড়িয়েছে। সমাধান হচ্ছে এশিয়ার সঙ্কট। তা আমরা দেখতে পাচ্ছি।
রাশিয়া আমেরিকাকে বলছে, “তুমি বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নাও, আমি মিয়ানমারে থাকি, আমরা কেউ কাউকে আক্রমণ করব না।”
আবার পুতিন মোদীকে বলছে, “চীনের সঙ্গে তোমার দ্বন্দ্ব কেন? বন্ধুত্ব তো হতে পারে। তাতে ভারতেরও লাভ, চীনেরও লাভ। ক্ষমতায় থাকতে চাইলে ভালো কাজ চাই।”
অন্যদিকে, পুতিন চীনকেও বার্তা দিচ্ছে, “ভারত তো সন্ত্রাসী দেশ নয়। বরং ভারত পার্বত্য চট্টগ্রাম আর বন্দর নিক, তুমি কিয়াকফিউ নাও। তোমারও লাভ, ভারতেরও লাভ। পাকিস্তান বরং তোমার জন্য ভয়াবহ। কারণ পাকিস্তান শক্তিশালী হলে তোমার উইঘুর উড়ে যাবে। কারণ তুমি উইঘুর মুসলিমদের সন্ত্রাসের ভয়ে বন্দি করে রেখেছো।”
চীন ভাবল, রাশিয়া মিত্র হিসেবে খারাপ কিছু বলছে না।
চীন বিষয়টা ভেবে দেখেছে। তাই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উষ্ণ হচ্ছে। মোদী যাচ্ছেন চীন সফরে। সরাসরি ভারত-চীন ফ্লাইট চালু হচ্ছে।
কে কী পেল?
রাশিয়া পেল দনবাস আর মিয়ানমারে একটি ঘাঁটি। চীন পেল কিয়াকফিউ। আমেরিকা পেল সেন্ট মার্টিন। আর ভারত পেল চট্টগ্রাম জেলা।
ভারত, চীন, রাশিয়া ও আমেরিকা সবাই মিলে মিয়ানমারের সরকারকে চাপ দিল আর বলল, “রাখাইন সমস্যার সমাধান করো।”
মিয়ানমার যায় কোথায়?
সমাধান করতে বাধ্য হলো। তখন আরাকান আর্মিও চুপ হয়ে গেল, কারণ তাদের অধিকার স্বীকৃত হলো। যুদ্ধ করার আর দরকার নেই। ভারতের প্রতি তাদের আনুগত্য আরও বেড়ে গেল।
পাকিস্তান ও বাংলাদেশ
এবার প্রশ্ন পাকিস্তান। তারা চুপ থাকবে। কারণ বেলুচিস্তান আলাদা হয়ে যাবে। এতে পাকিস্তান আগের চেয়েও দুর্বল হয়ে পড়বে।
আর বাংলাদেশ?
ছোট্ট একটা দেশ। অন্যের বলে বলিয়ান। তারা যখন সায় দেয় না তখন বাংলাদেশ নীরব হয়ে যাবে। পাকিস্তান ছাড়া বর্তমান মৌলবাদী বাংলাদেশ “দাঁড় ভাঙা কাঁকড়া।” অবস্থান হবে দ্বিতীয় ফিলিস্তিনের মতো। আয়তন ছোট্ট, কিন্তু বিশাল জনসংখ্যা। ক্ষুধা আর বিশৃঙ্খলার জীবন।
কারণ নীতিগতভাবে মিয়ানমার, চীন, রাশিয়া, ভারত ও আমেরিকার সঙ্গে এই মৌলবাদী ধারার কোনো মিল নেই। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একা হয়ে যাবে।
উপহার পাবে দেড় মিলিয়নের বেশি বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা। তারা আন্তর্জাতিক সাহায্য নিয়ে জীবন চালাবে।
কী বুঝলেন?
এই অঞ্চল এখন দাবার বোর্ড। প্রতিটি দেশ তাদের ভাগ চাইছে। আর বাংলাদেশ মৌলবাদের কারণে একা হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় ভারত–বাংলাদেশ যুদ্ধ কেবল সম্ভব নয়, বরং ক্রমেই অনিবার্য হয়ে উঠছে। এবার কেন যুদ্ধ হবে তা নিশ্চয় পরিষ্কার।
কারণ যুদ্ধ ছাড়া চট্টগ্রাম দখল করা সম্ভব নয়। এতে সব দেশ সায় দেবে। তা না হলে কারো স্বার্থ হাসিল হবে না। তাই বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই।
কিন্তু এখন এই যুদ্ধের হেতু কি হতে পারে?
আছে একটা।
সেটি হচ্ছে, সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ মন্দির। এটা হিন্দুদের জন্য কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ তা আমাদের বুঝতে হবে। আর জানতে হলে আমার পরবর্তী পোস্ট দেখুন।
বিদ্রঃ না পড়ে কমেন্ট করবেন না প্লিজ। আগে পড়ুন, বুঝুন তারপর কমেন্ট দিন যাতে আমার উত্তর দিতে সুবিধে হয়। প্রত্যেকর উত্তর হয়তো দিতে পারব না। তবে দিতে চেষ্টা করব।ধন্যবাদ।