দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে পৃথিবীর মানচিত্রে বহু দেশ স্বাধীন হয়েছে, ভেঙে গেছে, আবার গড়ে উঠেছে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই কিছু শক্তি ছিল যারা ধর্মকে হাতিয়ার করে দেশ দখলের চেষ্টা করেছে। ইতিহাসের পাতায় স্পষ্ট—মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়ার অনেক অঞ্চলে মুসলিম শাসন বিস্তারের নেশা দেখা গেছে।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবতার মাটিতে দাঁড়িয়ে দেখা যাচ্ছে, বর্তমান বিশ্বের ভূরাজনীতি আর সেই প্রাচীন স্বপ্নের জায়গা দেয় না। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের মৌলবাদীরা যেভাবে একসময় পুরো ভূখণ্ডকে মুসলিম রাষ্ট্র বানানোর স্বপ্ন দেখত, তা আজ সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক এবং ব্যর্থতার পথে।

অতীতের স্বপ্ন ও বাস্তবতার সংঘর্ষ

যদি ইতিহাসের দিকে তাকানো হয়, দেখা যায় ধর্মকে হাতিয়ার করে সাম্রাজ্য বিস্তার করা তখন সম্ভব ছিল। তলোয়ার হাতে নিয়ে আরব থেকে তুর্কিস্তান, আফ্রিকা থেকে ভারতীয় উপমহাদেশ পর্যন্ত মুসলিম শাসন বিস্তার লাভ করেছিল। বাংলাদেশও সেই বিস্তারের অংশ হয়েছিল, কিন্তু তখনকার প্রেক্ষাপট ছিল একেবারেই ভিন্ন—রাজনীতি ছিল বলপ্রয়োগের, জাতীয়তা ও ভূখণ্ডের ধারণা তখনো গড়ে ওঠেনি।

আজকের দিনে সেই পুরনো স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য যে পরিকাঠামো দরকার, তা আর নেই। বৈশ্বিক যোগাযোগ, প্রযুক্তি, আন্তর্জাতিক আইন, রাষ্ট্রসমূহের ভূ-কৌশল এবং নিরাপত্তা চুক্তি—সব কিছুই মৌলবাদীদের অগ্রযাত্রাকে আটকায়। সবচেয়ে বড় কথা, বর্তমান বিশ্বে সামরিক ও কৌশলগত শক্তির ভারসাম্য তাদের বিরুদ্ধে কাজ করে।

নেতানিয়াহু: মুসলিম মৌলবাদ প্রতিহতের প্রতীক

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আজকের বিশ্বে মুসলিম মৌলবাদ প্রতিহতের এক প্রতীকী নাম। তিনি শুধু ইসরায়েল নয়, পুরো পশ্চিমা বিশ্বকে বুঝিয়ে দিয়েছেন কিভাবে ধর্মীয় মৌলবাদকে রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে ঠেকাতে হয়। গাজা, লেবানন কিংবা ইরান—যেখানেই মৌলবাদের হুমকি এসেছে, নেতানিয়াহু কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তার বার্তা স্পষ্ট—ধর্মীয় সন্ত্রাসের মুখে কোনো আপস নেই।

এই নীতিকে বাস্তবায়ন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি, ইরানের সঙ্গে কঠোর নীতি এবং সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তার সিদ্ধান্তকে আরও প্রাসঙ্গিক করেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও একই ধারা অনুসরণ করেছেন, বিশেষ করে কাশ্মীর ইস্যু ও সীমান্ত নিরাপত্তায় কঠোর নীতি নিয়ে। পশ্চিমা বিশ্বও এই ধারা অনুসরণ করে মুসলিম মৌলবাদের বিস্তার ঠেকাতে প্রায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।

বাংলাদেশের ভৌগোলিক সংকট ও ভবিষ্যতের বাস্তবতা

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানও মৌলবাদীদের স্বপ্নের পথে বড় বাধা। চারদিকে ভারত, মিয়ানমার এবং বঙ্গোপসাগর দ্বারা পরিবেষ্টিত এই দেশটির পক্ষে সামরিক শক্তি দিয়ে কোনো ভূখণ্ড সম্প্রসারণ বা মৌলবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা একেবারেই অযৌক্তিক। বরং পরিস্থিতি বিপরীত হতে পারে। মিয়ানমার এবং ভারতের সামরিক শক্তি, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং কৌশলগত স্বার্থের কারণে বাংলাদেশের ভূখণ্ড বরং আরও ক্ষুদ্র হতে পারে যদি অযৌক্তিক মৌলবাদী কর্মকাণ্ডে তারা যুক্ত হয়।

আজকের বিশ্বের বার্তা একটাই—ধর্মীয় মৌলবাদ কোনো রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নয়। বাংলাদেশ যদি নিজের ভেতরে মৌলবাদকে প্রাধান্য দেয়, তাহলে আন্তর্জাতিক মহল কঠোর হবে, আর দেশের সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।