শিরোনাম পড়েই হয়তো অনুমান করতে পেরেছেন—আন্তর্জাতিক রাজনীতির খেলাঘরে কখনো শুধু হাসি-উল্লাস থাকে না। থাকে কান্না, কষ্ট আর প্রিয়জন হারানোর বেদনা। ইতিহাস সাক্ষী, শাসন ও শোষণের মাত্রা যখন অসহনীয় হয়ে ওঠে, তখন স্বাধীনতার তৃষ্ণা মানুষের ভেতর জেগে ওঠে। আর সেই জাগরণ একসময় রূপ নেয় যুদ্ধে।
এ যুদ্ধ কেবল একটি দেশের ভেতর সীমাবদ্ধ থাকে না। এর অভিঘাত ছড়িয়ে পড়ে সীমান্তের বাইরে, আঞ্চলিক অঙ্গনে, এমনকি বিশ্বমঞ্চেও। আজ মিয়ানমার ও রাখাইনের সমস্যা সেই স্তরে পৌঁছে গেছে—যেখানে স্থানীয় বিদ্রোহ আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতির দাবার চাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিন্তু সবচেয়ে তাৎপর্যের জায়গাটি অন্যত্র। এই সংকট শুধু মিয়ানমারের নয়; এর সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম—যার ভূরাজনীতি রাখাইন ও মিয়ানমারের অস্থিরতার সাথে সরাসরি সংযুক্ত।
এ লেখায় বাংলাদেশের ভূমিকায় বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ নেই। তবে যারা রাজনীতি, কৌশল ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করেন, তাদের জন্য বিষয়টি বোঝা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে বাংলাদেশি নাগরিক এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের জন্য এই বাস্তবতা জানা অপরিহার্য—কারণ এ অগ্নিঝড়ের প্রভাব একদিন না একদিন আমাদের ঘরেও পৌঁছাতে পারে।
✡️ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নতুন অগ্নিকেন্দ্র
মিয়ানমার বহু দশক ধরে যুদ্ধ, সামরিক শাসন ও জাতিগত সংঘাতের প্রতীক। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাখাইন রাজ্য—আরাকান আর্মির উত্থান এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের সাফল্যের কারণে—আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতির নতুন অগ্নিকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
আজ রাখাইন শুধু স্থানীয় সংঘাতের নাম নয়। এটি চীন ও ভারতের বিশাল বিনিয়োগের মাঠ, রোহিঙ্গা সংকটের জন্মভূমি, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্য করিডোরের সংযোগস্থল। তাই এখানে যা ঘটছে তা শুধু রাখাইনের নয়, বরং পুরো এশিয়ার রাজনৈতিক মানচিত্রে গভীর ছাপ ফেলছে।
✡️ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: এক ভাঙা রাজ্যের গল্প
রাখাইন বা আরাকান একসময় ছিল স্বাধীন রাজ্য। ১৮২৬ সালে ব্রিটিশরা বার্মিজদের কাছ থেকে এটি দখল করে নেয়। ঔপনিবেশিক যুগে রোহিঙ্গা ও রাখাইনদের বিভাজন আরও গভীর হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানপন্থী রাখাইন এবং ব্রিটিশপন্থী রোহিঙ্গারা একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করে। সেই বিভক্তির ক্ষত আজও বহমান।
১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর মিয়ানমারের সামরিক শাসকরা রাখাইনকে বঞ্চিত করে। একদিকে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ রাখাইনদের কেন্দ্র থেকে দূরে রাখা হয়, অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের “বিদেশি” তকমা দিয়ে নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়। ২০১৭ সালের গণহত্যা ও বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এই দ্বন্দ্বকে আন্তর্জাতিক সঙ্কটে রূপ দেয়।
✡️ আরাকান আর্মির উত্থান
এই পটভূমিতেই আরাকান আর্মির (AA) জন্ম। কয়েক হাজার যুবক-যুবতী কেন্দ্রীয় শাসন থেকে বঞ্চিত হয়ে হাতে অস্ত্র তুলে নেয়। গত কয়েক বছরে তারা দ্রুত শক্তি বাড়িয়েছে, চিন রাজ্যের পালেৎওয়া থেকে শুরু করে রাখাইনের ১৪টি টাউনশিপ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
AA এখন রাখাইনের নিরঙ্কুশ শক্তি হয়ে উঠছে। তবে তাদের লক্ষ্য পূর্ণ রাখতে হলে সিত্ত্ওয়ে, কিয়াউকফিউ ও মানাউং দখল করতেই হবে। কিন্তু তারা এখনো পূর্ণমাত্রার আক্রমণ চালায়নি। কেন?
✡️ তিনটি কৌশলগত হিসাব
হ্যাঁ, এই তিনটি হিসাব এক কথায় দেওয়া সম্ভব নয়। সংক্ষেপে বললেও অনেক লম্বা করে বলতে হয়। তাই নম্বর দিয়ে যতটুকু ছোট করে বিষয়টি বুঝানো যায় সেভাবে ব্যাখ্যা করবো।
১. চীনের ছায়া ও কিয়াউকফিউ
কিয়াউকফিউ এখন আর শুধু একটি আঞ্চলিক বন্দর নয়; এটি চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI)-এর অন্যতম স্তম্ভ। এই শহরের বুকে দাঁড়িয়ে আছে গভীর সমুদ্রবন্দর, যেখানে চীনা বিনিয়োগের পরিমাণ ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। এর সাথে রয়েছে প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেলের পাইপলাইন প্রকল্প, যার মূল্য প্রায় ২.৪ বিলিয়ন ডলার, এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (SEZ), যেখানে চীন দীর্ঘমেয়াদে শিল্পায়ন ও বাণিজ্যিক করিডোর তৈরির পরিকল্পনা করছে। শুধু তাই নয়, একটি ১৮০ মিলিয়ন ডলারের বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নতুন গ্যাস ক্ষেত্র উন্নয়নের জন্য কয়েকশ কোটি ডলারের চুক্তিও এখানেই হচ্ছে।
আজ হাজার হাজার চীনা প্রকৌশলী, শ্রমিক এবং নিরাপত্তা কর্মী কিয়াউকফিউতে নিয়োজিত। তাদের রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে বেসরকারি চীনা নিরাপত্তা কোম্পানি, যারা শুধু অস্ত্রশস্ত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং তারা ব্যবহার করছে অত্যাধুনিক সামরিক প্রযুক্তি—ড্রোন প্রতিরোধ ব্যবস্থা, ইলেকট্রনিক জ্যামার, এমনকি ক্ষেপণাস্ত্র বা রকেট জ্যামিং সিস্টেম। শোনা যায়, বন্দরের চারপাশে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার ডিভাইস বসানো হয়েছে, যা শুধু ড্রোন বা রেডিও সিগন্যালই নয়, ছোট রকেট হামলাও নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম। ফলে কিয়াউকফিউ কার্যত একটি “অদৃশ্য ঢাল” দিয়ে সুরক্ষিত।
এই বাস্তবতায় আরাকান আর্মি খুব ভালো করেই জানে—এখানে পূর্ণমাত্রার আক্রমণ মানে সরাসরি চীনের স্বার্থে আঘাত হানা। এর ফলে চীনা নাগরিক হতাহত হলে বেইজিংকে প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য করবে, যা এখনো পর্যন্ত চায়নি। কারণ চীন একদিকে মিয়ানমার সেনা জুন্টার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখছে, অন্যদিকে আরাকান আর্মির সাথেও গোপন যোগাযোগ রেখেছে। এই দ্বৈত নীতিই চীনের জন্য রাখাইনকে নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার।
তাহলে আরাকান আর্মির সামনে কী পথ খোলা? সরাসরি হামলার পরিবর্তে তারা বেছে নিয়েছে অবরোধ কৌশল—কিয়াউকফিউকে চারদিক থেকে ঘিরে ধীরে ধীরে চাপ সৃষ্টি করা। এতে একদিকে সেনাদের উপর রাজনৈতিক ও সামরিক চাপ বাড়ানো যায়, অন্যদিকে চীনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক ভাঙনের ঝুঁকিও এড়ানো যায়।
অতএব, কিয়াউকফিউ আসলে শুধু একটি টাউনশিপ নয়; এটি এখন এশিয়ার মহাশক্তির রাজনৈতিক ও সামরিক ছায়াতলে ঢাকা এক কৌশলগত ঘাঁটি। এখানেই বোঝা যায় কেন আরাকান আর্মি এখানে এক কদম ভুল করতে ভয় পাচ্ছে।
২. ভারতের শ্বাসপ্রশ্বাস: সিত্ত্ওয়ে
সিত্ত্ওয়ে বন্দর ভারতের জন্য নিছক একটি বাণিজ্যকেন্দ্র নয়, এটি কার্যত দিল্লির শ্বাসপ্রশ্বাসের নালী। দীর্ঘদিন ধরে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভৌগোলিকভাবে প্রায় অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে, যা কেবল সিলিগুড়ি করিডোর দিয়ে মূল ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত। তাই বিকল্প সমুদ্রপথের সন্ধান ভারতের কাছে ছিল একটি জাতীয় কৌশলগত স্বপ্ন।
এই স্বপ্ন রূপ নেয় কালাদান মাল্টি-মডাল ট্রানজিট প্রজেক্টে। প্রায় ১২০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়ে ভারত সিত্ত্ওয়ে বন্দর গড়ে তোলে। এর পরিকল্পনা হলো: কলকাতা থেকে জাহাজ আসবে সিত্ত্ওয়ে বন্দরে, সেখান থেকে কালাদান নদী ধরে পালেৎওয়া পর্যন্ত যাবে, তারপর সড়কপথে পৌঁছাবে মিজোরামে। এই করিডোর চালু হলে উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য বঙ্গোপসাগরে একটি সরাসরি দরজা খুলে যাবে।
AA যখন ২০২৩ সালে পালেৎওয়া এবং নদীপথ দখল করে নেয়, তখন ভারত বাধ্য হয় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে। কারণ দিল্লি জানে, এই প্রকল্প শুধু বাণিজ্য নয়—এটি ভারতের “অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি”-র অন্যতম ভিত্তি। এখানেই ভারতের ভূরাজনীতির সবচেয়ে দুর্বল জায়গা, তাই তাদের জন্য AA-এর সাথে সম্পর্ক তৈরি ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না।
ফলত, সিত্ত্ওয়ে আক্রমণ মানে শুধু একটি শহর দখল নয়, বরং ভারতের জাতীয় কৌশলে আঘাত। এতে ভারতের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সীমান্ত বাণিজ্যে ধস নামবে, এবং দিল্লির সাথে AA-এর সম্পর্ক ভয়াবহভাবে খারাপ হবে। আর ভারত একবার যদি প্রতিক্রিয়ায় কঠোর হয়, তবে মিজোরাম সীমান্ত দিয়ে AA-এর জন্য যে জরুরি পণ্য ও ওষুধ প্রবাহিত হচ্ছে, সেটিও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এই কারণেই AA এখন সবচেয়ে নিরাপদ কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছে অবরোধ—চাপ সৃষ্টি করা, কিন্তু সম্পর্ক নষ্ট না করা।
৩. বৈধতা ও শাসন
AA যে এলাকা দখল করেছে সেখানে শাসন প্রতিষ্ঠাই এখন তাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। রোহিঙ্গা ও চিন সম্প্রদায় জোরপূর্বক নিয়োগ, হত্যাযজ্ঞ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলছে। অনেক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন নিন্দা জানিয়েছে।
তাই নতুন আক্রমণ চালানোর বদলে AA মনোযোগ দিয়েছে—জনগণের আস্থা অর্জন, জনসেবা প্রদান, ও রাজনৈতিক বৈধতা প্রতিষ্ঠায়।
✡️ মানাউং ও সামরিক ঝুঁকি
মানাউং দ্বীপ এখনো মিয়ানমারের সেনাদের নিয়ন্ত্রণে রয়ে গেছে, এবং এটি আরাকান আর্মির জন্য এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। ভৌগোলিকভাবে দ্বীপটির অবস্থান এমন যে, সশস্ত্র সংঘাত শুরু হলে সেনারা সহজেই নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী ব্যবহার করতে পারে। সমুদ্রপথ থেকে গোলাবর্ষণ, আকাশ থেকে ড্রোন ও যুদ্ধবিমানের হামলা—সব মিলিয়ে মানাউং হবে এক প্রকার ফাঁদে আটকে পড়া যুদ্ধক্ষেত্র।
AA খুব ভালো করেই জানে, এই দ্বীপে সরাসরি আক্রমণ মানে এক অসম যুদ্ধ। তাদের স্থলবাহিনী ও সীমিত অস্ত্রশক্তি এখানে কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়বে। এর আগে উত্তর মিয়ানমারের বামো শহরে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেটিই তাদের সবচেয়ে বড় সতর্কবার্তা। কাচিন স্বাধীনতা আর্মি (KIA) এবং তাদের মিত্ররা মাসের পর মাস চেষ্টা করেও বামো দখল করতে পারেনি; বরং শহরটি অবিরাম বিমান ও আর্টিলারি হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সেখান থেকে তারা বুঝেছে—শুধু ভূখণ্ড দখলের জন্য মানুষ ও সম্পদের অযথা ক্ষয় মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।
মানাউং দখলের চেষ্টা করলে একই দৃশ্য এখানে পুনরাবৃত্তি হবে, আর তার ফল হবে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। স্থানীয় জনগণ বাস্তুচ্যুত হবে, দ্বীপের অবকাঠামো ধ্বংস হবে, আর আন্তর্জাতিক মহলও হয়তো তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাবে—কারণ সমুদ্রপথের নিরাপত্তা প্রশ্নে উঠে আসবে।
তাই AA আপাতত কৌশলগত ধৈর্য প্রদর্শন করছে। সরাসরি আক্রমণ না করে তারা অপেক্ষা করছে সঠিক সময়ের জন্য—যখন রাজনৈতিক বা সামরিক পরিস্থিতি তাদের পক্ষে ঘুরে আসবে। মানাউং-এর এই সামরিক ঝুঁকি তাই শুধু একটি দ্বীপের প্রশ্ন নয়, বরং AA-এর সমগ্র কৌশলগত পরিকল্পনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু।
✡️ জুন্টার পাল্টা খেলা
মিয়ানমারের সেনারা নীরব নেই। ২০২৫ সালের জুলাইয়ে তারা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে এবং AA-দখলকৃত টাউনশিপগুলোকে নির্বাচন মানচিত্রে ঢুকিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য, এসব এলাকায় নির্বাচনের মাধ্যমে বৈধতা দাবি করা।
কিন্তু AA স্পষ্টভাবে বলেছে—কোনো ভূখণ্ড ফেরত দেবে না, কোনো নির্বাচনের অনুমতি দেবে না। এজন্য তারা তিনটি করিডোরে সেনাদের প্রবেশ আটকে দিয়েছে—মাগওয়ে, বাগো ও আয়েয়ারওয়াদি অঞ্চলে।
✡️ “তৃতীয় ঢেউ”: ভবিষ্যতের ঝড়
AA আপাতত অপেক্ষায় আছে। হয় সেনারা আলোচনায় আসবে, নয়তো তারা শুরু করবে একটি সমন্বিত জাতীয় আক্রমণ—যাকে বলা হচ্ছে “তৃতীয় ঢেউ”।
এর আগে অপারেশন ১০২৭ (২০২৩) এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের আক্রমণ (২০২৪) মিয়ানমারের রাজনৈতিক মানচিত্র কাঁপিয়ে দিয়েছে। এবার যদি “তৃতীয় ঢেউ” শুরু হয়, তবে রাখাইনের যুদ্ধ শুধু আঞ্চলিক নয়, জাতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।
✡️ মানবাধিকার ও জনগণের ভোগান্তি
দখলকৃত এলাকায় জনগণ সবচেয়ে বেশি ভুগছে। খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ভারতের মিজোরাম থেকে আসা ওষুধের উপর নির্ভর করছে সবাই। রোহিঙ্গা ও চিন সম্প্রদায়ের উপর জোরপূর্বক নিয়োগ ও সহিংসতার অভিযোগ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রশ্নের মুখে ফেলছে—একদিকে তারা জুন্টাকে অগণতান্ত্রিক বলে নিন্দা করছে, অন্যদিকে প্রতিরোধশক্তির ভেতরেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠছে।
✡️ আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতি: রাখাইন কেন গুরুত্বপূর্ণ
- চীন: তার পাইপলাইন, বন্দর ও বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্প রক্ষায় ব্যস্ত।
- ভারত: উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বঙ্গোপসাগরের সাথে যুক্ত করতে মরিয়া।
- রাশিয়া: সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি ও জুন্টাকে কূটনৈতিকভাবে বাঁচাতে আগ্রহী।
- যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব: দূর থেকে মানবাধিকার নিয়ে কথা বলছে, কিন্তু সরাসরি হস্তক্ষেপে আগ্রহী নয়।
এইভাবে রাখাইন এখন এক আন্তর্জাতিক বোর্ডে দাবার ঘুঁটির মতো। প্রতিটি পদক্ষেপ আঞ্চলিক ভারসাম্য বদলে দিচ্ছে।
✡️ যুদ্ধ নাকি সমাধানের পথে?
রাখাইন আজ শুধু মিয়ানমারের একটি রাজ্য নয়—এটি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূরাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। এখানে যা ঘটছে তা চীন, ভারত, রাশিয়া ও পশ্চিমাদের স্বার্থকে প্রভাবিত করছে।
আরাকান আর্মি এখন এক সন্ধিক্ষণে। তারা যদি বৈধ শাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারে, তবে তাদের সামরিক সাফল্যও ভঙ্গুর হয়ে যাবে। অন্যদিকে সেনারা যদি আন্তর্জাতিক সমর্থন পায়, তবে যুদ্ধ আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে।
অতএব, রাখাইন এখনো জ্বলছে। আর এই আগুনের ধোঁয়া সীমান্ত ছাড়িয়ে পুরো এশিয়ার আকাশে ছড়িয়ে পড়ছে।কিন্তু SCO-এর পর যদি রাখাইনজুড়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে যেতে থাকে সেটি আর অপ্রত্যশিত কিছু নয়। তাহলে দ্রুত বদলাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। চোখ রাখুন।